ইমাম খাইর, সিবিএন:
শুক্রবার মহাখুশির দিন নোশিনদের। পড়ালেখার চাপের মাঝে পাওয়া দিনটি যেন ঈদ। সপ্তাহের ছুটির এই দিনে একটুখানি হলেও বেড়িয়ে আসতে মনটা উতাল পাতাল হয়ে যায় নোশিনদের। তার পুরো নাম নোশিন ফেরদৌস। পড়ে কক্সবাজার বিয়াম স্কুলে ৯ম শ্রেনীতে। ছাত্রী হিসেবে সে খুবই মেধাবী। তাই তো যে কোন কিছু দেখতে, শিখতে তার ঝুঁক প্রবণতা একটু বেশী।
শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নোশিনের অপর দুই বোন আফরা লিয়ানা মীম ও রাইদা জাফরীনকে সাথে নিয়ে মাছের রাজ্য দেখতে যায়। মানে ‘রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড’, যা দেশের প্রথম ফিস এ্যাকুরিয়াম।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ‘এ্যাকুরিয়াম অ্যাডভেন্সার’ নামে দুই ঘন্টার প্যাকেজ ছেড়েছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার যাত্রা করা ভিন্ন আমেজের এই প্যাকেজে যুক্ত হয় কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজের একাদশ (বিজ্ঞান) এর ছাত্রী তালবিয়াহ ইসলাম নিশাদ, একই কলেজের সুমাইয়া বিনতে আজাদ, বাহারছড়া নুরানী একাডেমীর চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র মাহতাব উদ্দিন সিয়াম, কক্সবাজার কেজির ২য় শ্রেনীর তাসনীম ইসলাম নুরী, নোভেরা তাওহীদ আলভী, সামিহা, তামিসা, আবিদ, অন্তরসহ একঝাঁক কচিকাচা শিক্ষার্থী।
নীচতলা থেকে পায়ে হেঁটে দুতলা-তিনতলা পর্যন্ত দেখেছে সমুদ্রে অদেখা জগতের উপভোগ্য অনেক কিছু।
উপরে মাছ, ডানে মাছ, বামে মাছ। প্রায় একশো প্রজাতির মাছের ভিতর দিয়ে পথ চলতে চলতে হঠাৎ হাঙ্গর মাছ সামনে এসে হাজির। মানুষ খেকো মাছ পিরানহা ধারালো দাঁত খুলে হা করে ছুটে আসছে। কুচিয়া, কচ্ছপ, কাঁকড়া, আউসসহ সাগরের তলদেশের নানা কিট পতঙ্গ। এর মাঝে গায়ে পরশ লাগিয়ে দেয়া সাগরের তলদেশের গাছ পালা, লতা, পাতা, গুল্ম, ফুল সত্যিই মন ভুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের।
নোশিন, মীম, রাইদা, নিশাদেরা সাগরের পাহাড়, গুহা, তলদেশ উঁচু নিচু আর এলোমেলো সাগর পথ পাড়ি দিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা উপভোগ করেছে সব কিছু। দেখেছে রোমাঞ্চকর থ্রিডি মুভি শো, এক্সাইটিং গেমিং জোন। এডুকেশনাল ব্রিফিং, ওশান এডুকেশন গ্যালারী, কিডস প্লেয়িং জোন ইত্যাদি পরিদর্শন করেছে। এসব কিছুর পর কনফারেন্স হলে তাদের জন্য আয়োজন করা হয় ‘ক্যুইজ’ প্রতিযোগিতা। সেখানে বিজয়ী ৪ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করে রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ। বিজয়ীরা হলো- সুমাইয়া বিনতে আজাদ, সামিহা, তামিসা, আবিদ, অন্তর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এর জেনালে ম্যানেজার কাজি মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, উপদেষ্টা আবুল কালাম আজাদ আবু, শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কবি জসিম উদ্দিন বকুল, দৈনিক সাঙ্গুর কক্সবাজার প্রতিনিধি ইমাম খাইর, প্রজেক্ট ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম।
এরই মধ্যদিয়ে শুরু হয় শিক্ষামূলক একাডেমিক ইনডোর প্যাকেজ ‘একুরিয়াম এডভেঞ্চার’। প্যাকেজটি রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডের সমুদ্র শিক্ষা ও গবেষণার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘রোরেক’ এর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী অফিসার শহিদুল ইসলাম কাজল ও ইমতিয়াজ মাহমুদ রিয়ান। বিভিন্ন সামুদ্রিক ও মিঠাপানির প্রায় ১৫০ প্রজাতির মাছসহ বঙ্গোপ সাগরের জীববৈচিত্র নিয়ে মনোমুগ্ধকর শিক্ষা ও জ্ঞানমূলক উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি জলবায়ূ পরিবর্তন, সমুদ্র দূষণ, ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে আগামী প্রজন্মের দায়িত্ব ও করণীয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিসরকে শুধুমাত্র বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একুরিয়াম নির্ভল বাস্তব সম্মত সমুদ্র সম্পর্কিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে ‘একুরিয়াম এডভেঞ্চার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সব শিক্ষার্থীর জন্য এই প্যাকেজ উন্মুক্ত।
কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় ভ্রমণ বিনোদনের জন্য বিশ্বমানের নতুন সংযোজনটি করেছেন দেশের বিশিষ্ট উদ্যোক্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এরই মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে সমুদ্র ও পরিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে পারবে।